আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে মেরে ফেলছি না তো?

childhood-Parenting
স্কুল-কলেজ কিম্বা বিশ্ববিদ্যালয়! সব জায়গা থেকে দেখতাম, কেউ একটু বেশি পড়লে তাকে ক্যাল্টু, আঁতেল কিম্বা নানা রকম কটুক্তি করা হতো। যার ছেলে-মেয়ে একটু ভাল পড়া পারতো কিম্বা ভাল রেজাল্ট করতো, তাদের মা-বাবাকেও অন্য ছাত্র-ছাত্রীর মা-বাবা সামনে বাহবা দিলেও প্রচন্ড রকম হিংসা করতো। যেখানে পরিশ্রমি ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহিত করার কথা, সেখানে তাদেরকে নানা রকমে নিরুৎসাহিত করা হয়।
 
অন্যান্য অভিভাবকগণ মন থেকে ভাল চাওয়া তো দূরের কথা, পারলো অভিশাপ দিতো যেন অন্য ভাল ছাত্রটা অসুস্থ থাকে, তার নিজের ছেলে মেয়ে ফার্স্ট হতে পারে। একটা উদাহরণ দেই, আমি এমনও দেখেছি, নিজের ছেলে ৯০ মার্কস পেয়েছে শুনে বাবা-মা প্রথমে খুশি হয়েছে, কিন্তু পাশের বাসার ভাবীর মেয়ে ৯২ পেয়েছে শুনে তাদের আবার মন খারাপ হয়েছে।
 
বিশাল একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে যায় আমাদের শৈশব-কৈশোর। যেখানে আমাদের সমাজ, পরিবার কিম্বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমাদের শেখানোর কথা ছিল Try for Excellency, তারা শেখাচ্ছে তুলনা, অসুস্থ কম্পিটিশন।
 
আমরা সবাই জানি, প্রত্যেকটি মানুষ ভিন্ন, তাদের চিন্তা চেতনা, আগ্রহ ভিন্ন। কাজেই নিজের সন্তান হয়তো গণিতে আগ্রহী বেশি, কিন্তু পাশের বাসার সন্তান গান পারে, নাচ পারে তাই নিজের সন্তানকেও প্রাইভেট টিউটর রেখে দিয়ে তার সমান হতে চাই। এসব টিউটর সিস্টেম কখনো টিউমার হয়ে ক্যান্সারে রুপান্তর হয়। ছেলে মেয়েরা কখনো কখনো অনেক প্রেশার সহ্য করতে না পেরে, পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। কাজেই এসব সমস্যার একমাত্র সমাধান পিতামাতা, শিক্ষকদের সচেতন হতে হবে। অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে।
 
সমস্যা যেহেতু আছে, সমাধানও আছে। চাইলেই স্কুলের পরীক্ষার ফলাফল নোটিশ বোর্ডে না টানিয়ে, প্রত্যেকজনকে আলাদাভাবে দিতে পারেন। বাচ্চাকে “সাদিয়ার চেয়ে বেশি নাম্বার পেতে হবে” এভাবে না বলে, বলতে পারেন ভালভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাও। পরেরবার আরো ভাল করতে হবে।
 
আমি বলছি না, বাচ্চারা খারাপ কাজ করলে শাসন করা যাবে না। আমি বলতে চাই, অসুস্থ প্রতিযোগিতায় না ঠেলে, বরং তাদের উৎসাহিত করতে হবে। আপনি একবার ভেবে দেখুন তো আপনার সাথে এমন তুলনামূলক চর্চা করা হয়েছিল কিনা? কিম্বা আপনার সন্তানকে এভাবে শাসাচ্ছেন কিনা?
 
বাচ্চারা খুব সংবেদনশীল। তারা যদি শৈশবের আনন্দটা উপভোগ করতে না পারে, তাহলে তারাই বড় হয়ে নানা রকম অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে। দেশে যে হারে ধর্ষণ, মারামারি বেড়ে গিয়েছে, কখনো কি ভেবে দেখেছেন কিভাবে এগুলোর বিস্তার বাড়ছেই? বুয়েট, ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ুয়া মেধাবীরা কেন অপরাধে জড়াচ্ছে? কারন সেই অসুস্থ প্রতিযোগিতা। কেউ ক্ষমতার জন্য, কেউ বা সমাজের সাথে তাল মেলানোর জন্য। হাজের খানেক জেলখানা করে কি দেশকে সভ্য করা যায়? কচি একটা কঞ্চি(বাঁশ)কে যেভাবে খুশি বাকাতে পারবেন, কিন্তা বাঁশ পেকে গেলে ভাংগবে তবু মচকাবে না। সমাজকে সভ্য করতে হলে, আগে শিশুদেরকে সভ্য করতে হবে। নিজ পরিবারে সভ্য চর্চা শুরু করতে হবে।
 
আমাদের এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে মেরে ফেলছি না তো?
AKM Nazrul

AKM Nazrul

Leave a Replay

About the Author of the article (AKM Nazrul Islam)

AKM Nazrul Islam is a Mechanical Engineer and Project Manager by profession. Currently, he is working in KyotoCooling LLC, TX, USA  (Work location: AWS Tokyo site) for the installation, commissioning, testing, and servicing of the Data Center HVAC system in Japan.

His fields of expertise are Project Management of Data Center HVAC Systems, Renewable Energy Plants such as Geothermal Energy, Waste Heat Recovery, Hydro Power, Wind Energy, and EPC-related works.

Recent Posts