বাংলাদেশে ব্যবসা, স্টার্ট-আপ, এবং ইভালি
১। ১৯৯৮-২০০১ সালের কথার। টাঙ্গাইলের ইসমাইল হোসেন সিরাজী নামের এক ব্যাক্তি প্রথাগত ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে নিজেরা একটা প্রতিষ্ঠান করেছিল। তারা প্রান্তিক গ্রাহক লেভেল থেকে বেশি সুদে মুনাফা দেবার নামে অনেক টাকা সঞ্চয়/ডিপোজিট কালেক্ট করেছিল। সাফা ঢেউটিন, সাফা টেলিভিশন, সাফা ফ্রিজ নামে বেশ কিছু পণ্য নিজেরা ফ্যাক্টরী থেকে বানাতো। কোন প্রকার মার্কেটিং ছাড়া নিজেদের অফিসের মাধ্যমে নিজেরা বিক্রি করতো। মানে ফ্যাক্টরীর উৎপাদন খরচের পর বাকি টাকা তাদের লাভ থাকতো। আর সিরাজী সেই ব্যবসার মূলধন সংগ্রহ করেছিল প্রান্তিক লোকদের থেকে। পরবর্তীতে তারা TVC, পত্রিকা বিজ্ঞাপনসহ শো-রুমসহ ভালই ব্যবসা করছিল। হঠাৎ একদিন সরকারের মনে হলো, এই লোক বাটপার। কোন প্রকার ব্যবসায়িক সুযোগ না দিয়ে, এই লোকের সব অফিসে তালা দেওয়া হল। শো-রুমের মালামাল এলাকার নেতা-খেতারা নিয়ে গেল। বেচারা সিরাজী ২০০২-২০০৮ পর্যন্ত জেল খাটলো। উনি শিল্পপতি বনে গেল। ধরা যা খাওয়ার খেলো সাধারন পাবলিক। লাভ কাদের আপনারাই হিসাব করুন।
২। আমার যদি স্মৃতিতে ভুল না হয়ে থাকে, তাহলে মিরপুরের যুবক নামে একটা সংস্থা ছিল । তারাও সঞ্চয়/ডিপজিট সংগ্রহ করতো। তারা বিশাল পরিমাণ ক্যাপিটালের মালিক হবার পর, এক রাতের নোটিশে সেই প্রতিষ্ঠান বন্ধ। ধরা যা খাওয়ার খেলো সাধারন পাবলিক। লাভ কাদের আপনারাই হিসাব করুন।
৩। এরপর আসুন এম.এল.এম. কোম্পানী ডেস্টিনি। হাজার হাজার কোটি টাকা কামালো। টেলিভিশন চ্যানেল খুললো, পত্রিকা বের করলো। সরকারী আমলা, সেনাবাহীনির অফিসার থেকে এমন কোন সেক্টরের লোক নাই যারা এই প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিল না। দীর্ঘদিন ব্যবসা করলো, কারো কোন সমস্যা ছিল না। যখন টাকার পরিমাণ বেড়ে গেল, দিল এটাকে বন্ধ করে। ধরা যা খাওয়ার খেলো সাধারন পাবলিক। লাভ কাদের আপনারাই হিসাব করুন।
৪। হলমার্ক গ্রুপ সোনালী ব্যাংক থেকে নামে বেনামে ২০০০ কোটি টাকা লোন নিয়ে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করলো। আমি হলমার্ক গ্রুপের এসেট ভ্যালু ইভালুয়েশন কমিটির একজন সদস্য ছিলাম। যতদূর জানি আমাদের সেই রিপোর্ট সোনালী ব্যাংক হেড অফিস, বাংলাদেশ ব্যাংক, এবং সংসদীয় অর্থ বিষয়ক কমিটিতে যেত। এটা নিয়ে অনেক রিপোর্ট পত্রিকায় পড়েছেন। আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না। কারন আমার ঘাড়ে মাথা একটাই। তানভীর সাহেব এখন জেল খাটছে। শুনেছি জামিনও নাকি পেয়ে যাবেন। ধরা যা খাওয়ার খেলো সাধারন পাবলিক (কারন ব্যংকের আমানত সাধারন পাবলিকের)। লাভ কাদের আপনারাই হিসাব করুন। এভাবে লিষ্ট করলে অনেক বড় লিষ্ট করা যাবে। কথা না বাড়িয়ে এবার আসি ইভালি নিয়ে।
৫। ইভালি ই-কমার্স ব্যবসা করছে বাংলাদেশে। তাদের ব্যবসার মডেল প্রথাগত মডেল থেকে একটু আলাদা। তাই তাদের গ্রোথ বেশ ভালই হচ্ছিলো। হঠাৎ প্রথম আলোর মনে হলো, একটা রিপোর্ট করে দিল। সাথে সাথে সব পত্রিকা, সরকারী অফিস হুমড়ি খেয়ে পড়লো, ইভালির মালিক রাসেল সাহেব, উনার স্ত্রীর ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করা হলো। সবচেয়ে অদ্ভুত লেগেছে এবারের প্রথম আলোর রিপোর্ট। যেখানে ইভালি সম্পর্কে রিপোর্ট করা হয়েছে, অথচ প্রতিষ্ঠানের কারো বক্তব্য নেওয়া হয় নি। ইভালি থেকে পন্য কিনেছেন, দেরিতে পেয়েছেন সে কথা উল্লেখ আছে। কিন্ত কারো টাকা এখন পর্যন্ত খোয়া গিয়েছে কিনা সেটা উল্লেখ করা হয় নি। যেহেতু ইভালির বিষয়টি এখন তদন্ত সাপেক্ষ ব্যাপার এবং সরকার তাদের ব্যাংক হিসাব খতিয়ে দেখছে, আমার এখানে মন্তব্য করা অনুচিত। তবে আগামীকাল যদি ইভালি বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে যে সকল গ্রাহকের টাকা ইভালির ফান্ডে আছে, তারা কোন টাকা ফেরত পাবে না, এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। কারন পূর্বের সকল অভিজ্ঞতা তাই বলে।
৬। আমার কথার সর্বশেষে যেটা বলতে চাই, আমি কোন প্রতিষ্ঠানের সাফাই গাইছি না। কিন্তু সিরাজী সাহেবের এসডিএস কোম্পানী, যুবক, ডেস্টিনি, হলমার্ক, কিম্বা ইভালি যদি ব্যবসায়িক ভাবে ভুল কন্সেপশন নিয়ে ব্যবসা করে, তাহলে তাদের ব্যবসায়িক কাজের শুরুতেই/ কিম্বা কিছু দিন পরে কেন সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নেয় না। সাধারন পাবলিকের হাজার হাজার কোটি টাকা জমা হবার পর কেন সরকার পদক্ষেপ নেয়? সরকার কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে গ্রাহকের টাকা ফেরত দেবার সুযোগ দেয় না কেন? এখন যদি কেউ বলেন, আজকে ইভালির ব্যবসার মডেল ভুল, তাহলে তার ভুল গুলো ধরিয়ে ব্যবসার মডেল চেঞ্জ করে ব্যবসা করতে বলেন না কেন? কেনই বা সরকার সেখানে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে ব্যবসাকে চালু রেখে জনগনের টাকার সুরক্ষা দেয় না? এখন আমি যদি জাপান থেকে বাংলাদেশে ফিরে এসে নতুন কোন ব্যবসায়িক মডেল নিয়ে কাজ করতে চাই, তাহলে এভাবে আমার ব্যবসা তো বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে! আমাদের মনে থাকার কথা, পাঠাও যখন ব্যবসা শুরু করে বড় হওয়া শুরু করলো, তাদের লাইসেন্স নিয়ে বিআরটি এ কত কাহিনী শুরু করলো! একটা সমাধানে আসায় তাদের ব্যবসা কিন্তু এখন সাস্টেইনেবল হয়েছে। তার মানে কি, জায়গা মত টাকা টাকা ঢাললে ব্যবসা টিকে থাকে? ছোট মুখে বড় কথা মানায় না, কিন্তু আমাদের দেশে অনেকেই অনেক কিছু করতে চায়, কিন্তু নানান সমস্যার কারনে তারা আগায় না। এখন যদি বের হয়ে আসে, ইভালির রাসেল সাহেব টাকা পাচার করেছে, তাহলে এর দায়িত্ব কি জনগনের সেটা খুঁজে বের করা, নাকি সরকারের? আর যদি মানি লন্ডারিং না করে থাকে, ব্যবসা প্রতিষ্টান যদি বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে কি গ্রাহকরা তাদের টাকা ফেরত পাবে? আমি কোন রাজনৈতিক দলের দোষ দিচ্ছি না। বরং সরকার এবং মনিটরিং কর্তৃপক্ষকে বলতে চাই, আপনারা কি সারা বছর নাকে তেল দিয়ে ঘুমান?
৭। একটা চেনা গল্প দিয়ে শেষ করি। ডাকাতরা এলাকা এলাকা ঘুরে ডাকাতি করতো। ডাকাত দলের সর্দার দেখলো, তাদের খুব কষ্ট হয়। তাই তারা একটা ব্যাংক করলো। সবাই এসে লাইন ধরে ব্যাংকে টাকা রাখা শুরু করলো। এখন ডাকাতরা এসিতে বসে বসে ডাকাতি করে।
#Startup #Evaly #Bangladesh #Business