কেন গ্রাজুয়েশন এর পর বিজনেস শুরু করা উচিত?

কেন বিশ্ব বিদ্যালয় হতে পাশ করেই একটা বিজনেস শুরু করা কিম্বা ইনভেষ্টমেন্ট করা দরকার?
 
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রীর চিন্তা ভাবনা থাকে, মোটামুটি ভাবে পাশ করতে হবে। পাশ করার পর চিন্তা থাকে, ভদ্রগোচের ভাল বেতনের একটা চাকুরী হলেই হলো। সেটাও হয়ত কিছুদিন পর জুটে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, চাকুরী পাবার পর তাদের মধ্যে নতুন কিছু শেখা, কোম্পানীর সিও/প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হবার স্বপ্ন আর থাকে না। তারা জানে সেই পথ অনেক কঠিন এবং লবিংসহ নানান সমস্যা। ৪-৫ বছর চাকুরী করে তারা কিছু টাকা পয়সা জমায়। এরপর তাদের স্বপ্ন হয় ভাল একটা বিয়ে করার।
 
নিজের পছন্দ হোক, কিম্বা পরিবারের পছন্দে বিয়ে করতে গিয়ে ৪-৫ বছরের জমানো অর্থ শেষ হয়ে যায়। ফলে ৩০-৩২ বছর বয়সী ছেলের হাতে কোন সঞ্চয় থাকে না। ক্যারিয়ার বলুন আর উদ্যোমী বলুন জীবনের এই Vital সময়ে যখন তার মাথায় রাজ্যের বিজনেস আইডিয়া ঘুরে,সারা দুনিয়া দাপিয়ে বেরানোর কথা ভাবে, তখন তার ব্যাংক ব্যালেন্স শূন্য। কাজেই শত শত বিজনেস ঘুমিয়ে যায়, চায়ের দোকানে।
 
গ্রাজুয়েশন হলো, চাকুরী হলো, সুন্দরী বউ হলো, এরপর হয়তো বাচ্চা কাচ্চা। বয়স ৩৫+। কাজেই ঝুঁকি নেবার সক্ষমতা কমে আসে। এবার ভাবতে থাকে, না বাবা থাক। ব্যবসায় যাবার দরকার নেই। তাই সে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে থাকে, একটা টয়োটা কিম্বা হোন্ডা গাড়ি হলেই খুশি। তাই আবার টাকা জমাতে থাকে।
 
বয়স ৪০ এর ঘরে পা দিতেই কিছু ব্যাংক লোন নিয়ে, সমস্ত সঞ্চয় খরচ করে একটা টয়োটা কিম্বা হোন্ডা গাড়ি হয়তো কিনে ফেলে। কিন্তু গাড়ি কেনার পর বুজতে পারে, সে তো কোন ইনভেষ্ট করে নাই, বরং গাড়ির মেইন্টেনেন্স এর জন্য মাসে খরচ বাড়ছে। গাড়ী পুরাতন হয়, দাম কমতে থাকে, এদিকে ছেলে মেয়ের পড়াশুনার খরচ বাড়তে থাকে। তার আর নতুন করে জীবনে কোন ব্যবসা, ইনভেষ্টমেন্ট কিম্বা ঝুঁকি নেবার মত সাহসটুকু আর অবশিষ্ট থাকে না। তাই আবার হয়ত কেউ কিছু ব্যাংক লোন নিয়ে, ডেভোলপারের পিছে পিছে ঘুরতে থাকে যদি মাসিক কিস্তিতে একটা ফ্ল্যাট কেনা যায়।
 
এদিকে তার চাকুরী চলছে, সকাল থেকে রাত, কাজের কোন ফুসরত নেই। বউ বাচ্চা নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাবার সময় দিকে। ওদিকে ছেলে-মেয়েরা বড় হয়ে যায়। তারাও বাবার মত একই জীবন চক্রে চলতে থাকে। বাবাটা যদি হজ্জ করতে পারে কিম্বা গয়া-কাশ্মী তে একবার ঘুরে আসতে পারে, তাহলে পুণ্য কর্মও হলো, বিদেশ ভ্রমণ। হয়ত এটাই জীবনের শুরু কিম্বা শেষবারের মত ভ্রমণ। আর শেষ-জীবনে পেনশনের টাকা কিম্বা কিস্তিতে কেনা ফ্ল্যাটে যদি শেষ নিঃশ্বাসটুকু কেউ ফেলতে পারে, তাহলে ধন্য ধন্য বলে রব উঠে যায় চারিদিকে
 
তাহলে পুরো লাইফ সাইকেলটা যদি খুব ভাল করে পর্যালোচনা করি, দেখা যাবে এটাই বেশিরভাগ সফল মানুষ মানুষের Life Cycle। এভাবেই আমার বাবা, তোমার বাবা কিম্বা আপনার বাবা জিবনটা পাড় করে দিয়েছে, দিচ্ছে এবং আমরাও দিবো হয়তো । কিন্তু এই পুরো জীবনে কেউ যদি পা পিছলে পরে যায়, তাহলে হয়ত বাড়ি,গাড়ি কিম্বা ছেলে-মেয়ের ভাল পড়াশুনার ট্রেইনটা মিস করে ফেলে।
 
অথচ চাইলেই জীবনটাকে ভিন্নভাবেই শুরু করা যেত। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষে থাকতে যদি একটা বিজনেস আইডিয়া নিয়ে কাজ করা যেত এবং পাশ করার পর, প্রথম ৫ বছর অনেকবার ব্যর্থ হতে হতে একসময় হয়তো একটা বিজনেস দাঁড়িয়ে যেত। আর সফল একবার হতে পারলে, জীবনের শুরু থেকেই ভাল চাকুরী, প্রথম থেকেই সিইও, সুন্দরী বউ, গাড়ি কিম্বা বাড়ি সবই হয়তো ৩৫ বছর বইয়সেই হয়ে যেত।
 
আমাদের বেশিরভাগ ছেলে-মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় প্রথম বর্ষ থেকে শুনতে থাকে, “তুমি কি কিছু পারো না, তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না”। বার বার এই কথা শুনতে শুনতে তার মনে, মগজে এটা গেথে যায়। আমার পরাশুনার সময় আমি হয়ত খারাপ করেছি, কিন্তু কোন সহপাঠী কিম্বা স্যার বলে নাই, “এটা পারোস নাই তো কি হয়েছে? সবাই পারে, তুইও পারবি। এবার হয় নাই তো কি হয়েছে, আগামীতে হবে!”
 
যাই হোক, লেখার শেষে এসে বলতে চাই, বিশ্ববিদ্যালয় হতে পাশ করার প্রথম ৫ বছর আপনি আসলে কি করতে চান, Life Cycle টা কিভাবে গড়তে চান সেটা নিয়ে চিন্তা করা খুব প্রয়োজন। কারন, ক্যারিয়ারের প্রথম ৫ বছর, আপনি লাইফ নিয়ে অনেক এক্সপেরিমেন্ট করতে পারেন। যেটি আপনি ৩৫ বছরে এসে সহজে করতে পারবেন না। কাজেই আপনি কি শেষ জীবনে একটা বাড়ি করতে চান, নাকি ২৫ বছরে একটা ছোট্ট কোম্পানীর মালিক হতে চান, সেটা আপনাকে ঠিক করতে হবে। হোক সেটা ১ জনের কোম্পানী কিম্বা ২ জনের।
 
আপনার লাইফের চিন্তাভাবনা এবং কর্ম আপনার ভবিষ্যৎ নির্ধারন করবে।
AKM Nazrul

AKM Nazrul

Leave a Replay

About the Author of the article (AKM Nazrul Islam)

AKM Nazrul Islam is a Mechanical Engineer and Project Manager by profession. Currently, he is working in KyotoCooling LLC, TX, USA  (Work location: AWS Tokyo site) for the installation, commissioning, testing, and servicing of the Data Center HVAC system in Japan.

His fields of expertise are Project Management of Data Center HVAC Systems, Renewable Energy Plants such as Geothermal Energy, Waste Heat Recovery, Hydro Power, Wind Energy, and EPC-related works.

Recent Posts